নেমন্তন্ন, পাত পেড়ে খাওয়া আর কিছু বদলে যাওয়া সময়ের কথা

ছোটবেলার, মানে আমার ছোটবেলার কথা বলছি – সময়টা ধরুন নব্বইয়ের দশকের একদম শুরু, কলকাতায় ” নৈব নৈব চ” করেও বেশ খানিকটা বিশ্বায়নের হাওয়া লেগেছে। আর সঙ্গে শুরু হয়েছে ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানোর হিড়িক। তখন বাচ্চাদের “কোন স্কুলে পড়?” প্রশ্নের সাথে সাথেই অভিভাবকদের জন্য ধেয়ে আসতো আরও দুটো প্রশ্ন – “কতো মায়নে?” আর “কিরকম চাপ?” প্রাইভেট টিউশনির এই রমরমা শুরু হয়েছিল কিনা জানিনা তবে আরেকটা প্রশ্নও করা হতো আমার বাবা মা কে প্রায়শই- “বাড়িতে কে পড়ায়?”

এই গৌরচন্দ্রিকা করার পেছনে কারণ হচ্ছে,এইসব প্রশ্ন করা হতো যখনই বাড়িতে কেউ আসতো, এই ধরুন- গরমের দিনে ঠান্ডা শরবত আর শীতকালে চা খেতে খেতে এই প্রশ্ন যে কতলোকে করেছেন তা বোধহয় গুনে হিসেব করা যাবে না। আবার উল্টোটাও হতো। কারও বাড়িতে গেছি সন্ধ্যেবেলা, আলোচনা, লোডশেডিং, বামফ্রন্ট ঘুরে কিন্তু ওই স্কুলে কেমন পড়াচ্ছে, কেরকম চাপ ইত্যাদির দিকে ঘুরে যেতই। কিন্তু তখনও এই লোকের বাড়ি যাওয়ার চলটা ছিল। আজকাল বিজয়ার দিনে ইনবক্স ভর্তি মেসেজ আসে কিন্তু খুব কাছের আত্মীয়র বাড়ি ছাড়া বোধহয় যাওয়া আসাটাকে একটু অদ্ভুত চোখেই দেখা হয়। সময় কোথায় মানুষের?

ছোটবেলায় কারও বাড়িতে বিজয়া করতে যাওয়া ছিল আমার কাছে একটা অতন্ত্য রোমাঞ্চকর জিনিস। তখন তো সারাদিন ফেসবুকে আড়ি পেতে নয় থেকে নব্বই সকলের হাঁড়ির খবর জানা যেত না, তাই কারও বাড়ি যাওয়া মানেই ছিল দেদার আড্ডা আর পিএনপিসির সুজোগ। কার ছেলে কোথায় ভর্তি হলো, কার বরটা একদম বৌ পাগলা আর কার মেয়ের বিয়ে, অনেক কিছুই জানা যেত এই আড্ডার আসরে। সঙ্গে রবি ঠাকুর তো সদা বর্তমান – “বঙ্গ জীবনের অঙ্গ”। আমার তখনো এত আড্ডাবাজ হওয়ার সুজোগ আসেনি, তবে পরিষ্কার মনে আছে যে আমার মূল আকর্ষণ ছিল দুটো – ১) সমবয়সীদের সাথে খেলা আর ২) খাওয়া।

তখন সন্ধ্যেবেলা কারও বাড়ি বিজয়ার দেখা করতে গেছেন আর রাতে খেয়ে ফিরবেন না এ ছিল অকল্পনীয়। আবার আমাদের বাড়িতেও কেউ এলে তাকেও নিয়ম করে রাতে খাইয়ে দেওয়া হতো। এখানে বলে রাখি আমার এবং আমার অধিকাংশ আত্মীয় স্বজন জন্মসূত্রে পূর্ববঙ্গীয়, মানে বাঙাল, আর বাঙাল রা আতিথেয়তার ব্যাপারে একটু বেশি দিলদরিয়া এ গুমোর আমাদের আছে।  তবে যা বলছিলাম, সেই সময় ফোনের এতো ঘনঘটা ছিল না। তাই অধিকাংশ সময়েই কারও বাড়িতে যাওয়ার সময় জানিয়ে যাওয়ার সুজোগ হতো না। কিন্তু কি অদ্ভুত, কোন দিনই ওই নেমন্তন্ন খাওয়া গুলোকে অস্বস্তিসূচক মনে হয়নি। যাদের বাড়ি গেছি তাদের জন্য বা আমাদের জন্য বা কেউ আমাদের বাড়ি এলে আমাদের জন্য। সেদিন রাতে বাড়ি তে যা রান্না হলো, তার সাথে হয়তো পাড়ার মোড়ের দোকান থেকে আনা হাতে করা গরম গরম রুটি আর মাংস বা তরকা। আর দুপুরবেলা কেউ এসে গেলে তো কথাই নেই। কতোদিন দেখেছি মাকে দুমুঠো চালের ভাত বসিয়ে দিতে দিতে, নিজের মনেই আমার দিকে তাকিয়ে বলতে “বুঝলি, মাছ তো আছেই, সঙ্গে একটা ডিম ভেজে দিই।” বিজয়া, নববর্ষ তো বচ্ছরকার উৎসব, ফি বছরে এমন অনেক দিন ছিল যেদিন হঠ করে হয়তো সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে  বাবার কোন বন্ধু সপরিবারে এসে হাজির, বা কোন আত্মীয় স্বজন। না খাইয়ে তাদের যেতে দেওয়াটা ছিল অভদ্রতা, তাই চা মিষ্টির পর যোগ হতো রাতের বা দুপুরের খাবার।

এইরকম নেমন্তন্ন তো ছিলই আর ছিল দিন ক্ষণ দেখে নতুন আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে সদ্যবিবাহিত বৌ বা নতুন জামাই কে ভালো মন্দ খাওয়ানোর পালা। বা জামাই ষষ্ঠী অথবা কেউ পরীক্ষায় ভালো পাশ করেছে সেই জন্য তাকে খাওয়ানো। এখন তাকে খাওয়ানো মানেই তো শুধু তাকে খাওয়ানো নয়, তা ছিল পারিবারিক হইহট্টগোল। আমি তো  সকাল থেকে দেদার খুশি- মা পড়তে বসতে বলছে না, কতো নতুন লোক আসবে, একটা ড্যায়ারি মিল্ক তো পাবই, আর তার সাথে কতো রকমের ভালোমন্দ খাবার। বাবা কে দেখতাম দুদিন আগে থেকেই বাজার থেকে ভালো মন্দ নিয়ে আসছেন। একদিন আগে আনতেন মাছ, মাংস, আর নেমন্তন্নের দিন মিষ্টি। মাংস আবার মুরগী হলে হবে না, কচি পাঁঠা বা রেওয়াজী খাসী হতে হবে। আর মাছ বলতে ইলিশ, সেটা ভালো না পাওয়া গেলে ভেটকী বা পাবদা। চিংড়ির চল  আমাদের বাড়িতে অতো না থাকলেও মাঝে মাঝে এই উপলক্ষে হতো। তবে হ্যাঁ, দু পদ মাছ তো হতোই, আর বাজারে ভালো মাছ পাওয়া গেলে আরও বেশী। শেষ পাতে মিষ্টি যাই থাক না কেন, মিষ্টি দই অতি অবশ্যই থাকতো। মা কে দেখতাম একদিন আগে চাটনী বানিয়ে রাখতো আর যতই রান্নার লোক থাকুক না কেন, এই দিনগুলোতে নিজের হাতে মাছ, মাংস টা রান্না করতে। অনেক সময় মার ঝাল, নুন কটকটা করে রান্না করা মাংসের আবদার থাকতো নিমন্ত্রিত দেরই কারো কাছ থেকে।

এরকম পাল্টা নেমন্তন্ন পেতেও খুব ভালো লাগতো। সবসময় যে কোন অনুষ্ঠান ইত্যাদি থাকতো তাও কিন্তু নয়। আমার পিসি খুব ভালো রান্না করেন। তা তার বাড়িতে অনেক সময়ই চলে যেতাম শনি রবিবার পড়লেই। বলাই থাকতো “শনি রবি দেখে চলে আসবি সকাল থেকে”।  পিসিমনির হাতের সাধারন আমুদি মাছের চচ্চরি খেয়ে আমাদের যা আহ্লাদ, স্পেশ্যাল মাটন কষা খেয়েও তাই। আসলে তখনও নেমন্তন্নের ব্যাপারে “লাঞ্চ আর ডিনার” এর ভাগাভাগি টা বাঙালি বাড়িতে ভালো করে ঢোকেনি। আবার মামা বাড়ি গেলে তো কাথাই নেই। আমার দিদুন খুব ভালো রান্না তো করেনই আবার সঙ্গে লোক খাওয়াতেও খুব ভালোবাসেন। আরা আমার দাদুর বাজার করার গল্প আগেও লিখেছি। তা এহেন বাড়িতে জামাই আদর যে চরমে পৌছয় সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। দাদু নিজে হাতে পছন্দ করে নিয়ে আসতেন ইলিশ, রুই, কাতলা, ট্যাংরা বা পাবদা। আমের দিনে আমা, কাঠাল, লিচু…কিচ্ছুটি বাদ পড়ত না সে ভুরিভোজ থেকে। ছোটবেলায় দেখতাম বাবার জন্য বড় থালা এবং তার পাশে নানা রকমের বাটি সাজিয়ে খেতে দিচ্ছে আমার দিদুন। কি রাগ আমার…একবার তো বাড়ি ফিরে ঠাকমে আর ছোটঠাকুমা কে দিলাম নালিশ ঠুকে – “জানোতো দিদুন না বাবাকে সাজিয়ে খেতে দেয়, আর আমাকে ছোট থালায়”। আমার মাতো রেগে আসুন- “হ্যাঁ, মামাবাড়ির তো সব বাজে তাই না?”

তারপর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কেরিয়ার, কলকাতার বাইরে থাকা সব কিছুর সুবাদে দূর থেকে দেখতে লাগলাম আস্তে আস্তে কেমন যেন বদলে যাচ্ছে সব কিছু। সব নেমন্তন্নই লাঞ্চ বা ডিনারের হিসাবে বাঁধা। অধিকাংশ সময়েই তা আবার বাড়িতে নয়, রেস্তোরায়। দোষ অবশ্য কাউকেই দেওয়া যায় না। মানুষের হাতে সময়ের বড্ড অভাব। আর যে মা, পিসিমারা নাওয়া খাওয়া ভুলে এইসব রান্না করতেন তাদেরও তো বয়সটা অনেকটাই বেড়েছে। জামাই, শ্বশুর যেখানে দুজনেই ব্যস্ত সমস্ত হয়ে বসের চাপে ডেডলাইন পূরন করতে ব্যস্ত তাদের কি আর সকাল সকাল বাজারের থলি হাতে প্রত্যেকদিন ইলিশ চিংড়ির কোনটা তাজা, কোনটার দাম অতিরিক্ত চড়া এইসব করার বিলাসিতা মানায়? তাই হাতের সামনেই অসংখ্য বাঙালি রেস্তোরা যখন পসড়া সাজিয়ে হাতছানি দিচ্ছে তখন তাই সই। জামাইষষ্ঠী না হোক উইকেন্ডে জম্পেশ ফ্যামিলি ডিনার তো আছে। আর কতো রকম পদ, কতো কম খরচে, এসব রান্না করতে বসলে আর রক্ষ্যে নেই। এই বাজারে ধনে প্রানে শেষ। আমার বাবা মা আবার এই ব্যাপারে আবার এখনও একটু প্রাচীন পন্থী। জামাইষষ্ঠী র নেমন্তন্নে জামাইকে শুধুমাত্র লাঞ্চ বা ডিনার খাওয়াবেন রেস্তোরায় এটা এখনও ভাবতে পারেন না। তাই প্রত্যেক বছর, এখনও অবধি, আম লিচু নিয়ে নেমন্তন্ন করতে আসেন আমার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে। এই বছর যখন আমরা দুজনেই দেশ ছাড়া, তখনও গেছিলেন। তবে যেবার আমার বিয়ের ঠিক পড়েই আমাদের পরিবারের তিন সদ্যবিবাহিত কন্যা এবং তাদের র জামাই এবং সপরিবারে সবাইকে নিয়ে আদর আপ্যায়ন করার হল, সেবারএকটা ভালো বাঙালি ক্যাটারার কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। একা মা বা রান্নার মাসি অতো রান্না করতে পারতেন না। বাবা ক্যাটারারের পিছনে পড়ে থেকে ভালো ইলিশ আর পাতুড়ির জন্য ভেটকির ব্যবস্থা করলেন। সঙ্গে কছি পাঠা আরও কয়েকপদ স্পেশ্যাল আইটেম ছিল। মনে নেই এখন ঠিক। তবে মা বার বার বলে দিয়েছিলেন সুক্তো থেকে শুরু করে ভাজা সব যেন হয় বাঙালি বাড়ির ঘরোয়া খাবারের মতো। বাবা নিজে হাতে বেছে মিষ্ট আর দই নিয়ে এসেছিলেন। পরিবর্তনের হাওয়ার ফাঁকে সুস্বাদু লাঞ্চ, ডিনার মিলিয়ে আড্ডা সহকারে সেদিন দিনটি ভালোই কেটেছিল।

আমার শ্বশুরবাড়িটিও এখন ও এই সাবেকী আমলের নেমন্তন্নের আসর থেকে বেরোতে পারেনি। বিয়ের পর দেখেছি জামশেদপুর হোক বা কলকাতায়, কেউ বাড়িতে এলে তাকে খাইয়ে দেওয়ার চলটা আছে। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে দিলখোলা বলেই বোধ হয় মনের মিলটা হয়েছে বেশ আমার। আর আমাদের বাড়িতে আছেন এক কাকা…বাঙালির বুজরুকির স্বভাব আছে বটে, তবে একটুও বাড়িয়ে বলছি না যে এই কাকা পারেন না আমন কোন রান্না নেই। আর তাই আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিন পরিবারের কয়েকজন লোক মিলে হওয়া ঘরোয়া আসরে কাকার তোপসে ফ্রাই সুপারহিট।  আমার পিসিশ্বাশুড়ির বাড়িতেও দেখেছি আমাদের বাড়ির মতোই খাওয়াদাওয়ার চল। সন্ধ্যেবেলা গেলেও লুচি করে খাওয়াবেনই।

তবে কিনা আমরা- মানে আমি আর আমার ওগো শুনছো তো বদলে যাওয়া সময়ের লোক – আমরা কিন্তু প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর পার্টির আয়োজনের জন্য বেছে নিয়েছিলাম একটি ব্যাংকোয়েট হল আর সেখানে আমিনিয়ার স্পেশ্যালিটি ক্যাটারিং। সময়টাও শনিবারের সন্ধ্যেবেলা যাতে সব বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজন রা আসতে পারেন সুবিধা মতো। বিয়ে বাড়ি থেকে তো ভিয়েন বসানো মিষ্টি আর নিজেরা বাজার করে ঠাকুর দিয়ে করানো রান্না র চল উঠেই গেছে, এখন বোধহয় এই ছোট খাতো অনুষ্ঠান গুলোতেও উঁকি মারছে আরো পলিশড, আরো রকমারি, আরো আন্তর্জাতিক হয়ে যাওয়া বাঙালি। আর তাই আজ মিষ্টি দই হোক না হোক, বাঙালি বিয়ের শেষ পাতে ব্রাউনি থাকেই। আসলে যতো দেখছি ততোই বুঝতে পারি যে আসলে এই ছোট ছোট জিনিস গুলো ক্রমশ হারিয়ে জাচ্ছে আমাদের মধ্যে থেকে।কিছুদিন আগে এক সদ্য বিবাহিত বান্ধবীর ফেসবুক এলবামে ছবি দেখলাম যে তার মামা বাড়ির সবাই মিলে এক চাইনিজ রেস্তোরায় ওদের বিয়ের পর পরই যে আদর আপ্যায়ন হয় তার ব্যাবস্থা করেছে। প্রথমে অবাক লাগলেও পড়ে ভেবে দেখলাম যে ছেলেটি অবাঙালি, বাঙালি খাবার ভালো নাই বা বাসতে পারে, সেখানে এই ব্যবস্থা তো মন্দ নয়। আমার দিদুন হলে অবশ্য আঁতকে উঠতেন।

বদলে গেছে নেমন্তন্নের ধরনও। আগেকার সেই “সকাল থেকে চলে আসবির” বদলে আজকাল সবসময়ই বলে দেওয়া থাকে নেমন্তন্নটা দুপুরের মানে “লাঞ্চের” না রাতের মানে “ডিনারের”। লাঞ্চে তাও কচ্চিত কদাচিৎ সাবেকি বাঙালি রান্নার দেখা মেলে তবে রাতের খাবারের আমি দেখেছি, অধিকাংশ সময়েই আয়োজন থাকে ভিনদেশী খাবারের। বদলে যাওয়া বাঙালির মুখের স্বাদবদলের ইতিহাস ও বোধহয় তার সাথে লিপিবদ্ধ। আসলে আমি নিজেই যদি কোন বাচ্চার জন্মদিন বা বিয়ে বাড়ির নেমন্তন্নে গিয়ে দেখি সেখানে ভাত, ডাল, লুচি হয়েছে তাহলে আমারই মুখ বেঁকে যাবে। নিদেনপক্ষে বাঙালি হয়ে যাওয়া বিরিয়ানি বা চাইনীজ তো চাই। আবার নেমন্তন্নের ও রকম সকম বদলেছে। কার কবে সুবিধা জেনে নেমন্তন্ন করা। এর মাঝেই কাজের চাপ বা বাচ্চার টিউশনির অজুহাত দিয়ে অনেকি আসেন না। ভাবতে অবাক লাগে, আমার পিশন মানে পিসেমশাই আমায় একবার গল্প করেছিলেন যে ওনাদের ছোটবেলায় বা কৈশোরবেলায় পাড়ায় কোনা বিয়ে, অন্নপ্রাশন জাতীয় অনুষ্ঠান থাকলে, পাড়ার ছেলেরা একবার ফার্স্ট ব্যাচে খেতেন আরেকবার একদম শেষে। অনেকে আবারা বেল্ট খুলে খেতে আরম্ভ করতেন যখন শেষ পাতে মিষ্টি র কম্পিটিশন শুরু হতো।

লেখাটা শেষ করবো আমার বিদেশ বাসের কিছু অভিজ্ঞতা থেকে। বিয়ের পড়ো আমার রান্না ঘরের দিকে যাওয়ার বিশেষ সুজোগ হয়নি। রান্না করতে ভালোই লাগে, তবে তা শখের…আর সব কিছুর জন্যই কাকা সদা প্রস্তুত। এমন কি আমি একদিন বাড়িতে ধনিয়ে চিকেন বানাবো তো তার জন্য কাকা ধনে পাতা টাও মিক্সিতে পিষে রেখেছিলেন। আমি অফিস থেকে ফিরে খালি খুন্তি নাড়লাম একদিন ওই শখ হলো বলে। তা এহেন আমি বিদেশ বিভুইয়ে একা একা এসে দেখলাম – এ তো মহা চাপের বিষয়। যাই হোক আমার ওগো শুনছোটি পূর্বে কিছুবছর বিদেশ বাস করেছিল, তাই রান্না বান্না খানিক টা হলেও জানতো। আরেক টি মহান বাচোয়া ছিল আমার। আই আই টি র হস্টেলের খাবার খেয়ে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছে, তাই আমি যাই রান্না করিনা কেন, তা অমৃতই মনে হবে। তা রান্না বান্না শুরু করলাম। ইউ টিউব আর মা, শ্বাশুড়িমা আর কাকা র টোটকার ভরসায়। কিন্তু নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে হবে শুনেই হাত পা ঠান্ডা। এখানে তো আর কলকাতার মতো সুবিধে নেই যে বন্ধুবান্ধব কে খাওয়াতে হলেই হাজার একটা রেস্তোরা আছে। বাড়িতে চান তো বাড়িতে দিয়ে যাবে। আর যে কটা ভারতীয় রেস্তোরা আছে সেগুলির খাবারের কথা না হয় নাই বললাম। মোট কথা নিজেকেই মাঠে নামতে হবে। এরই মধ্যে কয়েকজনের বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে তো কনফিডেন্স পুরো জিরো। এক এক জন কি দারুন রান্না করেন। একজন এতো ভালো বিরিয়ানি বানিয়ে খাওয়ালেন যে আমার আরসালানের বিরিয়ানি না খেতে পাওয়ার দুঃখ কিছুদিনের জন্য কমল। আরেকজন এমন জিলিপি বানালেন যে কি বলব। যাই হোক বুক ভরা সাহস, ফাঁকিবাজির কিছু উপায় এবং সবাই কে দেওয়া প্রবচন বানী – “আমি তো কিছুই পারি না” সঙ্গে নিয়ে কর্তা গিন্নীতে মাঠে নামলাম। প্রথম বার আমাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী র অনুষ্ঠান। ঠিক ঠাক ই হলো। চিংড়ির মালাইকারি তে বেশী ঝোল আর অন্য সব রান্না তেই আন্দাজের হিসেব কম বেশী করে। তারপর বেশ কয়েকবার রান্না করেছি, সাহস করে লোক ডেকে খাইয়েছি। আমার মা এখনও বিশ্বাস করতে পারেন না যে আমি এতসব পারি করতে। কিন্তু একটা ব্যাপারে এই বিদেশ বাসের কাছে আমার অসংখ্য কৃতজ্ঞতা থেকে যাবে। এখানে না এলে জানতাম ই না যে নিজের হাতে রান্না করে নেমন্তন্ন খাওয়ানোর চলটা বাঙালি সমাজ থেকে এখনও হারিয়ে যায়নি।

 

8 thoughts on “নেমন্তন্ন, পাত পেড়ে খাওয়া আর কিছু বদলে যাওয়া সময়ের কথা

  1. আহা সক্কাল সক্কাল অফিসে এসেই মনটা ভাল হয়ে গেল, খাঁটি নস্ট্যালজিয়া যাকে বলে। 🙂 দারুণ লাগলো।
    তবে ইয়ে, বানান কয়েকটা একটু ঠিকঠাক করে নিয়ো।
    ফন্ট নিয়ে চিন্তাটা এখন ধরতে পারলাম। মনে হয় ফন্টসাইজটা ‘থিম’ ডিপেন্ডেন্ট, একেকটা থিমের একেকটা ইন-বিল্ট ফন্ট সাইজ। তবে আমি আবার এসব ব্যাপারে খুব কাঁচা, তাই পাকা কারোর সাহায্য নিয়ো। 🙂

    Like

      1. Hmmm, amio ektu nara ghanta kore tai bujhlam je theme dependent hoy fonts gulo. kichu ekta keramoti korte hoy (google tai bollo) jatey tumi visual editor ey font size change korte paro alada alada post er jonyo, seita korar cheshta korchi…banan niye chinta ta amaro ache, ashole bangla typing ta eibar sorogoro hoteyi hobe, kintu oi ‘যায়’ er por daari koma boshalei je ‘জায়’ hoye jay 😦
        post ta bhalo legeche shuney amaro bhalo laglo khub 🙂 ar chobita amar ‘ogo shuncho’ mane Biswadeep er aiburobhaat er 😛 drishtishukh i shoi, tao to khanik pawa botey 😀

        Like

  2. sotyi nostalgic..chhoTobelar kawtha mone poRe gyalo…prothom proshno tinTe toh sokolei praay korto..:-D… khub bhalo laglo Poushali…aar aamrao Bangal kina..taai aaro beshi bhaalo laglo… 😛

    Tobe oi ..iye maane..banan koyekTa ekTu dekho…font size baRate chaaile jekhane ‘new text’ type korchho sekhane extreme left-e ‘Paragraph’ e click korle drop down aashe..sekhane option thaake..tobe Arijit jeTa bollo..mone hoy WP-e eTa theme based…

    Like

    1. Tumi Bangal? tomar stahe amar ekta mil barlo kintu 😛 jai bolo khawa dawa te amader dhare kache ashey na ora 😛 bhalo legeche shuney amaro khub bhalo laglo.
      Ei bangla typing ta ebar ropto korte hobe. Ar lyadh khabo na, promise..next bangla post ey ekta typo jatiyo kichu thakbe na 🙂 ….tobe oi “যায়” likhle “জায়” hoye jaay dari koma lagaleyi..e boro jwalatoner 😦 Font somoshyatio ache…porbar jonyo chokher pokhye ekdmi aramadayok noy ei font size ta. tobe oi ar ki. Arijit thiki boleche..amio onek google naraghanta korlam ei niye..dekhi thik thak korte pari kina.
      Ar khawar chobi niye bhbeo na..tumi Kolkatay acho bhabo, chaileyi eishob khete paro..ekhane to Mahtma Gandhi mara gechilen je shaaley, sei bochorer ilish kheye boltey hoy- “aha! ki bhalo” 😛

      Like

Leave a reply to Mehedi Hasan Sumon Cancel reply