“আচ্ছা, ঋতু বদলের সাথে কি প্রেমে পড়ার কোন সম্পর্ক আছে?”
“কে জানে? তোমার যত গাঁজাখুরি কল্পনা।”
“না ভাবো, এই বর্ষাকাল এলেই সবাই কেমন কবি, কবি হয়ে যায়। মন দেওয়া নেওয়া হয় বোধহয় খুব বেশী এই সময়।”
“যাঃ বাবা! কেন, এই তো শুনে এলাম এতোদিন ধরে যে মাঘ মাস আর বসন্ত কালই নাকি বাঙালির ভানু সিংহ থেকে টুকে কবিতা লেখার শ্রেষ্ঠ সময়।”
“তা যা বলেছো। তবে এখন কার এই কমপ্লেক্সের সরস্বতী পূজো গুলোয় কি আর সেই বাসন্তী শাড়ি আর শ্যাম্পু করে ফাঁপানো চুলের দেখা মেলে?”
“তুমি এখনো ড্যাব ড্যাব করে দেখো নাকি? ভীমরতি হলো নাকি?”
“ভিখারিদের কি ডাকাত হতে ইচ্ছে করবে না একদিনও??”
“তোমার ছেলের বয়স এখন এসব করার”
“কেন? আমি কি পয়তাল্লিশে প্রেমে পড়তে পারি না বলছো? আর তোমার ছেলের কথা বলছো? ওরা কি আর দোলের দিন সিমরনজিত কৌরকে কাছে পাওয়ার অনুভূতিটা টের পাবে ভাবছো। ওদের বচ্ছরকার দিন লাগে না… যা কিছু নিষিদ্ধ তা সবই আজ হাতের মুঠোয়। ওই গানটা আছে না…’ব্রহ্মা জানেন’…সেই তন্ত্রা, সামপ্লেস এলসের গল্প…একি হাসছো কেন নন্দিনী?”
“হাসছি…উফঃ…পেটে খিল ধরে যাচ্ছে ভাবতে ভাবতে যে এই রাত্তির বেলা না ঘুমিয়ে তুমি দুঃখবিলাস করছো…। বর্ষা, বসন্ত……সামনেই আসছে শরত…এই জন্যই বলি, যতই শিভাস হোক আজকাল আর এতো বেশী খেয়ো না। শুনবে না।দেখবে কাল সকাল হলেই এসিডিটি নয়তো মাথাভার। জেলুসিল টাও খেলে না……তা এতো পিরিত উথলে উঠলো কেন? পূজোসংখ্যা নাকি?”
“উফ! টিপিক্যাল হয়ে গেছো তুমি। সেই বদহজম আর পেটখারাপের গল্প…আর নয়তো ঝিলিকের মা…”
“হ্যাঁ, তুমি যেন বিশাল মাতব্বর হয়ে গেছো। সেইতো সপ্তাহান্তে দু পেগ মদ আর রবিবারের মাটন…আর বচ্ছরকার একবার প্রোমোশন।”
“ঠিকই বলেছো…সেই বসন্ত কেবিনের ফিশ ফ্রাই আর নকুড়ের জলভড়ার স্বাদ কি আর এই সুইটনারের পাওয়া যায়?”
“দেখেছো আমাকে টিপিক্যাল বলছো আর তুমি নিজেই কতোটা একঘেয়ে হয়ে গেছো। চপল আঠারো তে আটকে থাকলে তো আর জীবন চলে না শুভঙ্কর……এই তেইশ তলার ফ্ল্যাটে বসে আমাদের উত্তর কলকাতার এঁদো গলি নিয়ে হাহাকার করে কাজ নেই……এরকম নিরঙ্কুশ আরামের কলকাতা ও তো আমাদেরই কলকাতা শুভঙ্কর। এরকমটাই তো আমরাই চেয়েছিলাম।”
“ঠিক বলেছো। শোনো না…আজ আমার দিকের আলোটা জ্বালানো থাক…ভালো একটা উপন্যাস বেরিয়েছে এবার…ওই বর্ষায় প্রেম নিয়ে…পড়েই শোব।”
“ঠিক আছে…কিন্তু কাল সকালে কিন্তু ব্যাঙ্কে যেতে হবে, মনে আছে তো? আর পূজোসংখ্যা টা নিয়ে কিন্তু সোমবার অফিস চলে যেওনা।”
“ঠিক আছে, কে পড়বে তুমি?”
“নয়তো আর কে? তোমার ছেলে? সে পুজোসংখ্যা মানে কি তা জানে? পুজো পূজো গন্ধটা এই তেইশ তলা থেকে ঠিক পাওয়া যায়না জানো……কিন্তু যাই বলো আমাদের ক্লাবহাউজের সাইজটা কিন্তু সবার থেকে বড়। রিঙ্কুদেরটা দেখলাম তো আজকের পার্টিতে……আমাদের টাই মাপে বড়, তাই না?”
এইভাবেই চলতে থাকে টুকটাক আলাপচারিতা, নুন হলুদের গন্ধ মাখা দাম্পত্যের মাপজোখ, আর অনেক আলোকবর্ষ পেরিয়ে, কোন এক কলকাতা শহরের প্রান্তে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথনের আড়ি পাতে আরো কোনো এক শুভঙ্কর ও নন্দিনী। 🙂
“-– তুমি আজকাল বড্ড সিগারেট খাচ্ছ শুভন্কর।
— এখুনি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি…
কিন্তু তার বদলে??
–বড্ড হ্যাংলা। যেন খাওনি কখনো?
— খেয়েছি।
কিন্তু আমার খিদের কাছে সে সব নস্যি।
কলকাতাকে এক খাবলায় চিবিয়ে খেতে পারি আমি,
আকাশটাকে ওমলেটের মতো চিরে চিরে,
নক্ষত্রগুলোকে চিনেবাদামের মতো টুকটাক করে,
পাহাড়গুলোকে পাঁপর ভাজার মতো মড়মড়িয়ে,
আর গঙ্গা?
সে তো এক গ্লাস সরবত।
–থাক। খুব বীরপুরুষ।
–সত্যি তাই…
পৃথিবীর কাছে আমি এই রকমই ভয়ন্কর বিস্ফোরণ।
কেবল তোমার কাছে এলেই দুধের বালক,
কেবল তোমার কাছে এলেই ফুটপাতের নুলো ভিখারি,
এক পয়সা, আধ পয়সা কিংবা এক টুকরো পাউরুটির বেশী আর কিছু চিনিয়ে নিতে পারিনা।”
(কথোপকথন ১১, পূর্ণেন্দু পত্রী)
এই কলকাতা কোন শুভঙ্করের আর নন্দিনীর?
(বিঃ দ্রঃ ছবিটি আমার নিজের তোলা। ব্যবহারের পূর্বে অনুমতি নেওয়া বাঞ্ছনীয়)
দু-বার পড়লাম … দুঃখবিলাস হয়ত সত্যি-ই কিন্তু বড় ভালো লিখেছ… 🙂
LikeLike
অনেক ধন্যবাদ 🙂 আমি বেশ ভয়ে আছি…আজকাল বাঙালি যা অ সহিষ্ণু হয়ে উঠছে সেই সূত্রে রে রে করে গালাগালি না দেয়। এখন তো সবকিছুকেই ভগবান হিসেবে পূজো করার চল 🙂
LikeLike
।।সত্যি, আমাদের কলকাতা কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছে। লেখাটা অনবদ্য। অসংখ্য ধন্যবাদ।।
LikeLike
ধন্যবাদ মনোজিত 🙂 আর আমার ব্লগে সুস্বাগতম 🙂
LikeLike
বেশ অন্যরকম লাগলো, খুব সুন্দর পৌষালী। 🙂
LikeLike
ধন্যবাদ অরিজিত 🙂
LikeLike
Namaskar.
aami Mahalaya’r Pitri Tarpan mantra Google a khunjte khunjte aapnaar ei asdharon website ta khunje pelam. khuuuuuub bhalo laglo.
ei je lekha ta porlam, seta akebare bartamaner Kolkata’r gandho makha, atodur theke tai khub nostalgic laglo, ektu chin chine byatha o anubhuto holo, Pujo aaschhe je, aami katto dure……..khub miss korbo ei bachhor, tar upor ei Corona’r sob somoyer chokh rangani to cholchhei
khub bhalo thakun, aapnaar website er sob lekha guloi porbo dhire dhire.
suvechchha
PARTHA SARATHI BANERJEE
Ludhiana
Punjab
LikeLike