প্রায় অনেকদিন বাদে ইচ্ছে হল আমার এই গালগল্পের পাতাটা আবার একটু নেড়েচেড়ে দেখি। তার কারণ যে এক্কেবারে নেই তা নয়। কিছুদিন আগে আমি একট অভিজ্ঞতা সঞ্চয়/জোড়দার করলাম- যে কিছু লোক এমন আছে যারা দুনিয়ারাজ্যের যেখান এই থাকুন না কেন, গুল মারতে এদের জুড়ি মেলা ভার।
কি ভাবছেন তো যে এ তো আকছাড়ই ঘটে, বিশেষ করে বঙ্গ সমাজে যেখানে আপনি মস্ত বড় বাজারের থলি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তো ওমনি পড়শির চোখ টাটাবে। কথায় আছে “বাঙালি কাঁকড়ার জাত”, তাই পড়শির বাড়িতে ২ কিলোর ইলিশ রান্না হচ্ছে টের পেলেই ওমনি পিএনপিসি শুরু।
“আরে নিশ্চয়ই ঘুষ খায়। ভেট দিয়েছে কোন লোক”।
সামনে দেখা হলে কিন্তু অন্য বচন।
“বাহ! ভালো ইলিশ পেলেন দেখছি, তা কোথাকার?”
“হ্যা, ডায়মন্ড হারবারের। একদম তাজা, আজ সকালেই ধরেছে”
“ওহ! আমার আবার ওসব ডায়মন্ড হারাবার টাড়বার চলে না বুঝলেন। আমার পদ্মা ছাড়া ঠিক রোচে না। স্পেশ্যাল অর্ডার দিয়ে আনাই। তা কতো পড়লো?”
যারা পড়ছেন তারা এতক্ষণে নিজের পাড়াতুতো কাকু বা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কারোনা কারো সাথে মিল খুজে পেয়ে গেছেন নিশ্চয়ই। আসলে এরকম আমড়াগাছির দুটো উদ্দেশ্য থাকে সাধারনতো- এক, পাতি বাংলায় জাকে বলে খোঁজ নেওয়া আর দুই, আদতে যাই হোক বা থাকুক না কেন, অন্যের থেকে বড় হতেই হবে এবং তা করার জন্য গুল মারার থেকে ভালো উপায় আর নেই।
এই যেমন ধরুন আপনি নতুন গাড়ি কিনেছেন হয়তো। লোক দেখানি কেতা মেরে ফেসবুক ভর্তি ছবি লাগিয়েছেন। এদিকে সবাই অভিনন্দন জানালেও ভেতরে কার কোথায় পিন মারছে বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন। বলা বাহুল্য আপনি সেটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন। কিছু লোক আবার এমন থাকবেই যারা ব্যাপারটা না পারছে গিলতে না পেছে ফেলতে। নিভৃতে চ্যাটে জিজ্ঞেস করবেই-
“তা গাড়ি কিনলি? কতো পড়লো?”
“এই তো লাখ ছয়েক।
“পুরোটাই দিলি? নাকি লোন নিলি?”
আপনি হয়তো বোঝালেন কত ধানে কত চাল, কিন্তু এখনো লোকদেখানির শেষ হয়নি।
“ওহ! ভালো। তবে ছোট গাড়ি কেন কিনলি?”
আপনি বলতে গিয়েও বললেন না হয়তো “আঙ্গুর ফল টক”, কিন্তু মোক্ষম বোমাটা ঠিক তখনই পড়ে-
“আসলে আমার জানিসতো ছোট গাড়ি পছন্দ নয়, ভাবছি নেক্সট ইয়ার আমি একটা হন্ডা সিটি কিনব।”
তা সেই নেক্সট, টেক্সট মেসেজে নয় নয় করে দু দুটো “হ্যাপি নিউ ইয়ার” পার করে ফেলল, আপনার হয়তো মাঝে মাঝে মনে হয় ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন “কিরে হন্ডা সিটি কি হল?” কিন্তু আবার ভাবেন এই কথাটা বলে বন্ধুমহলে এই হিংসুটে কে নিয়ে খোরাক টা মন্দ হয় না।
এ তো গেলো সমবয়সীদের/বন্ধুদের কথা। আপনার মা হয়তো আপনার গাড়ি কেনার কথাটা গর্ব ভরে ফোন করে আপনার এলা পিসির মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে জানাবেন। প্রায় দু বছর পর হয়তো ফোন করছেন, তাই একটু ভনিতা তো দরকার। তাও আবার যাকে ফোন করছেন, ধরে নিন সম্পর্কে এক কাকিমা হন, তিনি হয়তো বিখ্যাত ভাবে “আমার বেশী টাকা আছে গোছের” গালগল্প করেন। হয়তো বা সেই আলগা তারেই ইচ্ছে করে ছড় কাটতেই ফোন। আহা! আপনার মা কি ভুলে গেছেন আপনার দিদির বিয়ের সময় এই কাকিমা কেরকম গয়নাগাটি আর খরচের বহর দেখে মুখ গোমড়া করে রইলেন সারা বিয়েবাড়ি। ভালো করে কথাও বললেন না। সবাই মুখ টিপে হেসে বলল্ল “স্বভাব গেলো না”।
আবার বছর ঘুরতেই, এই কাকিমার মেয়ের বিয়ের সময় যা হাঁক পাড়লেন। অতি সাধারন বেনারসী আপনার দিদির সাথে তুলনা স্বার্থেই হয়ে গেল “ডিজাইনার” আবার তার সাথে বিনা জিজ্ঞাসায় দামো বললেন “৪৫ হাজার”। নিন্দুকেরা আঁতকে উঠে বললেন “শাড়িটার খোল টাও ভালো না, গয়নাও তো লিকলিক করছে, তত্ত্বর দেখা নেই…গুল মারার জায়গা পায় না”
যাই হোক আপনার মা তো কি গুছিয়ে বলবেন ভেবে নিয়ে ফোন টা করে ফেলেছেন। আপনার সামনের মাসের বিদেশ যাত্রার খবর টাও ভাসিয়ে শুনিয়ে রাখবেন তাও ঠিক করেছেন।
“হ্যালো, দীপা?”
“হ্যা, কে বলছো? রমা নাকি?”
এবার খানিকক্ষণ কে কেমন আছে, কতোদিন পরে জোগাজোগ, শরীর টরীর নিয়ে আপোনার মা অনেক ভনিতা করলেন। তারপর নেমে পড়লেন “টেক্কা দেওয়ার” খেলায়।
“একটা সখবর দিয়ি তোমায় দীপা, আমার ছেলে জানোতো গাড়ি কিনেছে।”
আপনার মা মনে মনে তারিয়ে তারিয়ে ভাবছেন কেমন ছাই রঙ এর হয়ে গেল দীপা কাকিমার মুখটা। জবাবেও বুঝতে পারলেন।
“ওহ!”
“হ্যাঁগো ব্র্যান্ড নিউ।”
“হ্যাঁ আজকাল তো এতো ছোটছোট গাড়ির কিচির মিচির। সারা রাস্তা জুড়ে ভিড়” খেলায় খানিকটা সামলে নিলেন দীপা কাকিমা।
আপনার মা তো রেগে আগুন। নিজের মেয়ে হলেই এতক্ষণে গাড়িটার এমন গুনগান করতেন যে মনে হতো ওতাই দুনিয়ার সেরা গাড়ি। ফেরারি তো তুচ্ছ।
“হ্যা, ক্ষমতা থাকলে কিনে নেয়। তা দীপা তোমার মেয়ে জামাইয়ের কি খবর?” প্রশ্নটা যে শুধু কুশল বিনিময়ের জন্য করা তা দীপা কাকিমা আর আপনার মা দুজনেই ভালো করে জানেন। আপনার মা র উদ্দেশ্য অবশ্যই খোঁচা মেরে আপনার বিদেশ যাত্রার খবরটা জানানো। তলে তলে বেশ ভালোই খবর রাখেন, কবের থেকে ম্যানেজারের সামনে হাত পা থেকিয়ে, তেলের বোতল নিয়ে বসে আছে কর্তা গিন্নী ওরফে দীপা কাকিমার মেয়ে জামাই। উদ্দেশ্য কোন্মতে যদি একবার কালাপানি পেরোনো যায়। অনসাইট, অনসাইট করে যে দীপার জামাই পাগল হওয়ার জোগাড় তা নিয়ে আপনাদের বাড়িতে আগেই একদিন জব্বর পিএনপিসি হয়েছে, আপনার পিসে আর ওই যুগল একই অফিসে কাজ করে কিনা।
“ভালোই আছে। আমার জামাই তো এখন দারুন প্যাকেজ পাচ্ছে, জানো এবঅছর আমার মেয়েও ৩০% ইঙ্ক্রিমেন্ট পেয়েছে। এই নিয়ে এই বছরে এই থার্ড টাইম। এখন তো ওর প্যাকেজ প্রায় ৬০ লাখ”
আপনার মার পিলে প্রায় চমকে যাওয়ার অবস্থা। দীপা কাকিমা বা যারা এরকম টেক্কাবাজির খেলাতে অভ্যস্ত, তারা ধরেই নেন সাম্নের লোকটি এক্কেবারে অগা। আপনার পিসে যিনি অভিজ্ঞতার সুবাদে দীপা কাকিমার মেয়ে জামাইয়ের অফিসেই আরেকটু উচুদরের কর্মচারী তিনি সেদিন দুঃখ করছিলেন যে সামান্য প্রফিট কম হওয়ায়, এবার নাকি সব ইঙ্ক্রিমেন্ট বন্ধ করে কস্ট কাটিং করছে কোম্পানি। আপনার মা ও এই সুযোগ ছাড়বেন কেন? বললেন- “ও, তাই নাকি? ভালো তো, তবে ওদের ওই অনসাইট টা হলো না না?”
দীপা কাকিমা আমতা আমতা করছেন দেখে, আপনার মা বাজিটা খেলে দিলেন- “এই দেখো বলতেই ভুলে গেছিলাম, আমার ছেলেকে জানোতো বাইরে পাঠাচ্ছে কোম্পানি থেকে।”
প্রায় অদ্ভুত একটা নীরবতার পর দীপা কাকিমা বললেন-
“তাই, ভালো…রিঙ্কি আর ওর বর তো চাইলেই যেতে পারে। তা কোথায় যাচ্ছে?”
“এই তো আমেরিকা। ওখানে ডলার রোজগার করে আসুক কিছুদিন। এখানে আচ্ছা আচ্ছা লোক যা পায়, তা ও দু তিন মাসে রোজগার করবে।”
পিনটা বেশ ভালোই ফুটলো মনে হয় কারণ আপনার মাকে হয়তো কথাটা না শেষ করতে দিয়েই দীপা কাকিমা প্রায় হামলে পড়ে বলে উঠলেন- “হ্যা, হ্যা, জানি জানি। আমার মেয়ে জামাইয়ের ও তো সিঙ্গাপুর চলে যাওয়ার কথা। আজকাল তো আবার জানোতো আমেরিকা কেউ যেতেই চায় না। সিঙ্গাপুরে অনেক বেশী টাকা।”
“কি যে বল, টাকা দিয়েই সব হয় নাকি। সিঙ্গাপুর কে তো বলেই “পুওর ম্যান্স ইউ এস এ”, শুনেছি খুব খাটায় নাকি, আর যাই বলো আমেরিকান ডলারের দামটা কিন্তু এখন সিঙ্গাপুর ডলারের থেকে বেশী।”
অর্থনীতির ব্যাপার টায় কেঁচে গেলেন দীপা কাকিমা। এই ব্যাপারে রিঙ্কি কে না জিজ্ঞেস করেই একটা বেমালুম বলে দিয়েছেন, বেশী না বলাই ভালো আর।
কিন্তু আপনার মা ছাড়বেন কেন, পাকা ঘুটি কপাত করে খেয়ে ফেলার সময় এসে গেছে।
“তা কবে যাচ্ছে গো তোমার মেয়ে?”
“এই তো, ঠিক হলে তোমাদের জানাতাম। আসলে ওরা ওখানে একটা ফ্ল্যাট কিনে এক্কেবারে যাবে।”
আবার অবাক হওয়ার পালা আপনার মার। দীপা কাকিমার মেয়ের যখন বিয়ের পর পাসপোর্ট হল তখন সে কথা সবাইকে ফোন করে করে জানিয়েছিল। আর সে কিনা এরকম খবরটা চেপে রেখেছিল এ বিশ্বাস করা কল্পনার ও অতীত। গত তিন বছরে নিদেন পক্ষে নিউ টাউন না হোক রাজারহাটে ও এক টা ফ্ল্যাট কেনেনি, আর বাগুইহাটিতে ভাড়া বাড়িতে থেকে সল্ট লেক বলে চালায়, তারা আবার কিনছে সিঙ্গাপুরে ফ্ল্যাট। মেজাজ টাই বিগড়ে গেল আপনার মার। একথা সেকথা র পড় ফোনটা রেখে দিলেন। ভাবলেন কেন যে ফোনটা করতে গেছিলেন।
আপনারও এরকম মনে হয় নিশ্চয়ি। যখন দেখেন ব্লাফবাজিতে পারদর্শী কিছু লোক নিজেরা কিছু করবে না, কিন্তু অন্য কেউ কিছু করলেই একইসাথে সেটা ছোট করবে আবার এমন আকাশচুম্বী গুল মারবে যে সবাই জেনেও হাসবে না কাঁদবে ঠিক করতে পারবে না।
আমার সাথেও এরকম মাঝে মাঝেই হয়। ওপরের কথাগুলো কাল্পনিক, চরিত্রগুলোও। কিন্তু সার সংজ্ঞা টা কাল্পনিক নয়। আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যাশার পারদ উপরে উঠতে উঠতে এমন জায়গায় পৌছয় যে সেখান থেকে ফিরে আসতে অনেকেই পারে না। এই গুলবাজ রাও না। অস্বীকার করে লাভ নেই যে আমরা কেউই সত্যবাদী জুধিষ্টির নই, সময়ে অসময়ে আশে পাশে আমরাও গুল মার। কিন্তু জখনি দেখবেন কেউ ঊর্ধ্ব তর স্তরে গুল মারছে, তখন তাকে ভুলটা শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ তা আপনার মূল্যবান সময়ের অত্যাধিক অপচয়। উল্টে খোরাক করুন। কারন এর থেকে ভালো “কমেডি নাইটস” আর পাবেন না জীবনে। আর ঘরোয়া আড্ডায় বা বন্ধুদের সঙ্গে পিএনপিসি তে এগুলোই জমে ভালো।
পুনশ্চ – এবারের পর্বটা পড়ে মনে হতেই পারে যে এই খোজ নেওয়া এবং অন্যকে অগা ভেবে গালগল্প ঝাড়ার সুযোগ টা বঝি বাবা কাকা বা মা মাসি পিসি স্থানীয় লোকেরাই নেন। আজ্ঞে, সে গুঁড়ে বালি, কারণ স্বভাব জিনিসটা কোন বয়স, আয়সীমানা, প্রথাগত শিক্ষা দীক্ষার ধার ধারে না। পরের পরবে সেরকমই কিছু নিয়েই পিএনপিসি করবো ভাবছি।
কি ভাবছেন তো যে এ তো আকছাড়ই ঘটে, বিশেষ করে বঙ্গ সমাজে যেখানে আপনি মস্ত বড় বাজারের থলি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তো ওমনি পড়শির চোখ টাটাবে। কথায় আছে “বাঙালি কাঁকড়ার জাত”, তাই পড়শির বাড়িতে ২ কিলোর ইলিশ রান্না হচ্ছে টের পেলেই ওমনি পিএনপিসি শুরু।
“আরে নিশ্চয়ই ঘুষ খায়। ভেট দিয়েছে কোন লোক”।
সামনে দেখা হলে কিন্তু অন্য বচন।
“বাহ! ভালো ইলিশ পেলেন দেখছি, তা কোথাকার?”
“হ্যা, ডায়মন্ড হারবারের। একদম তাজা, আজ সকালেই ধরেছে”
“ওহ! আমার আবার ওসব ডায়মন্ড হারাবার টাড়বার চলে না বুঝলেন। আমার পদ্মা ছাড়া ঠিক রোচে না। স্পেশ্যাল অর্ডার দিয়ে আনাই। তা কতো পড়লো?”
যারা পড়ছেন তারা এতক্ষণে নিজের পাড়াতুতো কাকু বা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কারোনা কারো সাথে মিল খুজে পেয়ে গেছেন নিশ্চয়ই। আসলে এরকম আমড়াগাছির দুটো উদ্দেশ্য থাকে সাধারনতো- এক, পাতি বাংলায় জাকে বলে খোঁজ নেওয়া আর দুই, আদতে যাই হোক বা থাকুক না কেন, অন্যের থেকে বড় হতেই হবে এবং তা করার জন্য গুল মারার থেকে ভালো উপায় আর নেই।
এই যেমন ধরুন আপনি নতুন গাড়ি কিনেছেন হয়তো। লোক দেখানি কেতা মেরে ফেসবুক ভর্তি ছবি লাগিয়েছেন। এদিকে সবাই অভিনন্দন জানালেও ভেতরে কার কোথায় পিন মারছে বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন। বলা বাহুল্য আপনি সেটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন। কিছু লোক আবার এমন থাকবেই যারা ব্যাপারটা না পারছে গিলতে না পেছে ফেলতে। নিভৃতে চ্যাটে জিজ্ঞেস করবেই-
“তা গাড়ি কিনলি? কতো পড়লো?”
“এই তো লাখ ছয়েক।
“পুরোটাই দিলি? নাকি লোন নিলি?”
আপনি হয়তো বোঝালেন কত ধানে কত চাল, কিন্তু এখনো লোকদেখানির শেষ হয়নি।
“ওহ! ভালো। তবে ছোট গাড়ি কেন কিনলি?”
আপনি বলতে গিয়েও বললেন না হয়তো “আঙ্গুর ফল টক”, কিন্তু মোক্ষম বোমাটা ঠিক তখনই পড়ে-
“আসলে আমার জানিসতো ছোট গাড়ি পছন্দ নয়, ভাবছি নেক্সট ইয়ার আমি একটা হন্ডা সিটি কিনব।”
তা সেই নেক্সট, টেক্সট মেসেজে নয় নয় করে দু দুটো “হ্যাপি নিউ ইয়ার” পার করে ফেলল, আপনার হয়তো মাঝে মাঝে মনে হয় ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন “কিরে হন্ডা সিটি কি হল?” কিন্তু আবার ভাবেন এই কথাটা বলে বন্ধুমহলে এই হিংসুটে কে নিয়ে খোরাক টা মন্দ হয় না।
এ তো গেলো সমবয়সীদের/বন্ধুদের কথা। আপনার মা হয়তো আপনার গাড়ি কেনার কথাটা গর্ব ভরে ফোন করে আপনার এলা পিসির মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে জানাবেন। প্রায় দু বছর পর হয়তো ফোন করছেন, তাই একটু ভনিতা তো দরকার। তাও আবার যাকে ফোন করছেন, ধরে নিন সম্পর্কে এক কাকিমা হন, তিনি হয়তো বিখ্যাত ভাবে “আমার বেশী টাকা আছে গোছের” গালগল্প করেন। হয়তো বা সেই আলগা তারেই ইচ্ছে করে ছড় কাটতেই ফোন। আহা! আপনার মা কি ভুলে গেছেন আপনার দিদির বিয়ের সময় এই কাকিমা কেরকম গয়নাগাটি আর খরচের বহর দেখে মুখ গোমড়া করে রইলেন সারা বিয়েবাড়ি। ভালো করে কথাও বললেন না। সবাই মুখ টিপে হেসে বলল্ল “স্বভাব গেলো না”।
আবার বছর ঘুরতেই, এই কাকিমার মেয়ের বিয়ের সময় যা হাঁক পাড়লেন। অতি সাধারন বেনারসী আপনার দিদির সাথে তুলনা স্বার্থেই হয়ে গেল “ডিজাইনার” আবার তার সাথে বিনা জিজ্ঞাসায় দামো বললেন “৪৫ হাজার”। নিন্দুকেরা আঁতকে উঠে বললেন “শাড়িটার খোল টাও ভালো না, গয়নাও তো লিকলিক করছে, তত্ত্বর দেখা নেই…গুল মারার জায়গা পায় না”
যাই হোক আপনার মা তো কি গুছিয়ে বলবেন ভেবে নিয়ে ফোন টা করে ফেলেছেন। আপনার সামনের মাসের বিদেশ যাত্রার খবর টাও ভাসিয়ে শুনিয়ে রাখবেন তাও ঠিক করেছেন।
“হ্যালো, দীপা?”
“হ্যা, কে বলছো? রমা নাকি?”
এবার খানিকক্ষণ কে কেমন আছে, কতোদিন পরে জোগাজোগ, শরীর টরীর নিয়ে আপোনার মা অনেক ভনিতা করলেন। তারপর নেমে পড়লেন “টেক্কা দেওয়ার” খেলায়।
“একটা সখবর দিয়ি তোমায় দীপা, আমার ছেলে জানোতো গাড়ি কিনেছে।”
আপনার মা মনে মনে তারিয়ে তারিয়ে ভাবছেন কেমন ছাই রঙ এর হয়ে গেল দীপা কাকিমার মুখটা। জবাবেও বুঝতে পারলেন।
“ওহ!”
“হ্যাঁগো ব্র্যান্ড নিউ।”
“হ্যাঁ আজকাল তো এতো ছোটছোট গাড়ির কিচির মিচির। সারা রাস্তা জুড়ে ভিড়” খেলায় খানিকটা সামলে নিলেন দীপা কাকিমা।
আপনার মা তো রেগে আগুন। নিজের মেয়ে হলেই এতক্ষণে গাড়িটার এমন গুনগান করতেন যে মনে হতো ওতাই দুনিয়ার সেরা গাড়ি। ফেরারি তো তুচ্ছ।
“হ্যা, ক্ষমতা থাকলে কিনে নেয়। তা দীপা তোমার মেয়ে জামাইয়ের কি খবর?” প্রশ্নটা যে শুধু কুশল বিনিময়ের জন্য করা তা দীপা কাকিমা আর আপনার মা দুজনেই ভালো করে জানেন। আপনার মা র উদ্দেশ্য অবশ্যই খোঁচা মেরে আপনার বিদেশ যাত্রার খবরটা জানানো। তলে তলে বেশ ভালোই খবর রাখেন, কবের থেকে ম্যানেজারের সামনে হাত পা থেকিয়ে, তেলের বোতল নিয়ে বসে আছে কর্তা গিন্নী ওরফে দীপা কাকিমার মেয়ে জামাই। উদ্দেশ্য কোন্মতে যদি একবার কালাপানি পেরোনো যায়। অনসাইট, অনসাইট করে যে দীপার জামাই পাগল হওয়ার জোগাড় তা নিয়ে আপনাদের বাড়িতে আগেই একদিন জব্বর পিএনপিসি হয়েছে, আপনার পিসে আর ওই যুগল একই অফিসে কাজ করে কিনা।
“ভালোই আছে। আমার জামাই তো এখন দারুন প্যাকেজ পাচ্ছে, জানো এবঅছর আমার মেয়েও ৩০% ইঙ্ক্রিমেন্ট পেয়েছে। এই নিয়ে এই বছরে এই থার্ড টাইম। এখন তো ওর প্যাকেজ প্রায় ৬০ লাখ”
আপনার মার পিলে প্রায় চমকে যাওয়ার অবস্থা। দীপা কাকিমা বা যারা এরকম টেক্কাবাজির খেলাতে অভ্যস্ত, তারা ধরেই নেন সাম্নের লোকটি এক্কেবারে অগা। আপনার পিসে যিনি অভিজ্ঞতার সুবাদে দীপা কাকিমার মেয়ে জামাইয়ের অফিসেই আরেকটু উচুদরের কর্মচারী তিনি সেদিন দুঃখ করছিলেন যে সামান্য প্রফিট কম হওয়ায়, এবার নাকি সব ইঙ্ক্রিমেন্ট বন্ধ করে কস্ট কাটিং করছে কোম্পানি। আপনার মা ও এই সুযোগ ছাড়বেন কেন? বললেন- “ও, তাই নাকি? ভালো তো, তবে ওদের ওই অনসাইট টা হলো না না?”
দীপা কাকিমা আমতা আমতা করছেন দেখে, আপনার মা বাজিটা খেলে দিলেন- “এই দেখো বলতেই ভুলে গেছিলাম, আমার ছেলেকে জানোতো বাইরে পাঠাচ্ছে কোম্পানি থেকে।”
প্রায় অদ্ভুত একটা নীরবতার পর দীপা কাকিমা বললেন-
“তাই, ভালো…রিঙ্কি আর ওর বর তো চাইলেই যেতে পারে। তা কোথায় যাচ্ছে?”
“এই তো আমেরিকা। ওখানে ডলার রোজগার করে আসুক কিছুদিন। এখানে আচ্ছা আচ্ছা লোক যা পায়, তা ও দু তিন মাসে রোজগার করবে।”
পিনটা বেশ ভালোই ফুটলো মনে হয় কারণ আপনার মাকে হয়তো কথাটা না শেষ করতে দিয়েই দীপা কাকিমা প্রায় হামলে পড়ে বলে উঠলেন- “হ্যা, হ্যা, জানি জানি। আমার মেয়ে জামাইয়ের ও তো সিঙ্গাপুর চলে যাওয়ার কথা। আজকাল তো আবার জানোতো আমেরিকা কেউ যেতেই চায় না। সিঙ্গাপুরে অনেক বেশী টাকা।”
“কি যে বল, টাকা দিয়েই সব হয় নাকি। সিঙ্গাপুর কে তো বলেই “পুওর ম্যান্স ইউ এস এ”, শুনেছি খুব খাটায় নাকি, আর যাই বলো আমেরিকান ডলারের দামটা কিন্তু এখন সিঙ্গাপুর ডলারের থেকে বেশী।”
অর্থনীতির ব্যাপার টায় কেঁচে গেলেন দীপা কাকিমা। এই ব্যাপারে রিঙ্কি কে না জিজ্ঞেস করেই একটা বেমালুম বলে দিয়েছেন, বেশী না বলাই ভালো আর।
কিন্তু আপনার মা ছাড়বেন কেন, পাকা ঘুটি কপাত করে খেয়ে ফেলার সময় এসে গেছে।
“তা কবে যাচ্ছে গো তোমার মেয়ে?”
“এই তো, ঠিক হলে তোমাদের জানাতাম। আসলে ওরা ওখানে একটা ফ্ল্যাট কিনে এক্কেবারে যাবে।”
আবার অবাক হওয়ার পালা আপনার মার। দীপা কাকিমার মেয়ের যখন বিয়ের পর পাসপোর্ট হল তখন সে কথা সবাইকে ফোন করে করে জানিয়েছিল। আর সে কিনা এরকম খবরটা চেপে রেখেছিল এ বিশ্বাস করা কল্পনার ও অতীত। গত তিন বছরে নিদেন পক্ষে নিউ টাউন না হোক রাজারহাটে ও এক টা ফ্ল্যাট কেনেনি, আর বাগুইহাটিতে ভাড়া বাড়িতে থেকে সল্ট লেক বলে চালায়, তারা আবার কিনছে সিঙ্গাপুরে ফ্ল্যাট। মেজাজ টাই বিগড়ে গেল আপনার মার। একথা সেকথা র পড় ফোনটা রেখে দিলেন। ভাবলেন কেন যে ফোনটা করতে গেছিলেন।
আপনারও এরকম মনে হয় নিশ্চয়ি। যখন দেখেন ব্লাফবাজিতে পারদর্শী কিছু লোক নিজেরা কিছু করবে না, কিন্তু অন্য কেউ কিছু করলেই একইসাথে সেটা ছোট করবে আবার এমন আকাশচুম্বী গুল মারবে যে সবাই জেনেও হাসবে না কাঁদবে ঠিক করতে পারবে না।
আমার সাথেও এরকম মাঝে মাঝেই হয়। ওপরের কথাগুলো কাল্পনিক, চরিত্রগুলোও। কিন্তু সার সংজ্ঞা টা কাল্পনিক নয়। আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যাশার পারদ উপরে উঠতে উঠতে এমন জায়গায় পৌছয় যে সেখান থেকে ফিরে আসতে অনেকেই পারে না। এই গুলবাজ রাও না। অস্বীকার করে লাভ নেই যে আমরা কেউই সত্যবাদী জুধিষ্টির নই, সময়ে অসময়ে আশে পাশে আমরাও গুল মার। কিন্তু জখনি দেখবেন কেউ ঊর্ধ্ব তর স্তরে গুল মারছে, তখন তাকে ভুলটা শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ তা আপনার মূল্যবান সময়ের অত্যাধিক অপচয়। উল্টে খোরাক করুন। কারন এর থেকে ভালো “কমেডি নাইটস” আর পাবেন না জীবনে। আর ঘরোয়া আড্ডায় বা বন্ধুদের সঙ্গে পিএনপিসি তে এগুলোই জমে ভালো।
পুনশ্চ – এবারের পর্বটা পড়ে মনে হতেই পারে যে এই খোজ নেওয়া এবং অন্যকে অগা ভেবে গালগল্প ঝাড়ার সুযোগ টা বঝি বাবা কাকা বা মা মাসি পিসি স্থানীয় লোকেরাই নেন। আজ্ঞে, সে গুঁড়ে বালি, কারণ স্বভাব জিনিসটা কোন বয়স, আয়সীমানা, প্রথাগত শিক্ষা দীক্ষার ধার ধারে না। পরের পরবে সেরকমই কিছু নিয়েই পিএনপিসি করবো ভাবছি।
ভালোই লাগলো । ব্লগার মারুফ ডট কম
LikeLike
dhonyobad 🙂
LikeLike
হেহে ….এটা একদম ঠিক…এরকম মাল হামেশাই দ্যাখা যায়… 😛 কয়েকটা টাইপো আছে …পারলে সময় করে এডিট করে দিও… বললাম বলে কিছু মনে কোরোনা প্লিজ 🙂
LikeLike
hya! akchar dekhte pabe, ar bangali holey to kothayi nei..doladoli te jnuri mela bhar ;P ar thiki bolecho, typo to to ache, etey kichu money korini ami…ashole bangla font ey likhte giye majhe majheyi gublet kore feli. maratmok rokomer chonchol mon amar…eigulo shodhratey hobe ektu adhtu 🙂
LikeLike